শ্রীকৃষ্ণ ও বাঁশি
- dbwebdesk
- Nov 6, 2020
- 2 min read

বাঁশি শুনলেই প্রথমেই যে নামটি মনে আসে, তা হলো শ্রীকৃষ্ণ। আর শ্রীকৃষ্ণের নাম করলে প্রথমেই মনে আসে বাঁশির কথা। শ্রীকৃষ্ণ ও বাঁশি এভাবেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন হিন্দু শাস্ত্রে। মনে করা হয়, বাঁশি হলো মানুষ কর্তৃক সর্ব প্রথম আবিস্কৃত বাদ্য যন্ত্র গুলির মধ্যে একটি। প্রায় চার হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো ইতিহাস এটির। ফলে, হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখিত সত্য যুগের সাথে ও বিভিন্ন দেব দেবীর সাথে এই বাদ্য যন্ত্রের বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। পুরান সহ অন্যান্য হিন্দু গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে এটির।
শ্রী কৃষ্ণের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে ভাবে জড়িত এই বাদ্য যন্ত্রটি নিয়ে রয়েছে অনেক লোকগাথা। কথিত আছে, যে, একদিন শ্রীকৃষ্ণ দুঃখিত মনে বনে ঘুরছিলেন। এমন সময় তিনি একটি বাঁশ ঝাড়ের সামনে উপস্থিত হন এবং ওই বাঁশ ঝাড়কে তিনি একটি বিশেষ অনুরোধ করেন। তিনি তাকে তাঁর জন্য প্রানত্যাগ করতে বলেন এবং সেই বাঁশ দিয়ে তিনি নিজের বাঁশি তৈরি করেন। যেহেতু বাঁশঝাড় তাঁর আদেশে অক্লেশে প্রানত্যাগ করে, তাই এই ভক্তের প্রতি শ্রদ্ধা বশতঃ শ্রী কৃষ্ণ কখনো বাঁশিকে নিজের থেকে আলাদা করেননি। বাঁশির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের একটি মহান তত্ত্বকে উন্মোচন করা হয়- দেওয়াই হলো প্রকৃত পাওয়া। (Giving is Receiving).
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে শুধু মাত্র রাধারানীই পাগলিনী ছিলেন না। ব্রজ ভূমি থেকে শুরু করে, পশু পাখি কীটপতঙ্গ তথা সকল গ্রামবাসী বিভোর থাকতেন এই সুরে।
বলা হয়, ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রী কৃষ্ণ সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাল পরিচালিত করেন তাঁর বাঁশির সুরে। এই বাঁশির সুর অদ্বিতীয় ও ঐশ্বরিক । এই বাঁশির সুর লয়ের মতোই এই ব্রহ্মাণ্ডে সব কিছুতে তাঁর নিয়ম বিরাজ করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, মহাভারতে অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি যে ব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুতে বিরাজমান, ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পরিচালক, তা প্রকট করেছিলেন।
বাঁশিকে তুলনা করা হয়, শ্রী কৃষ্ণের প্রকৃত ভক্তের সাথে। বাঁশি যেরকম ভিতরে ফাঁপা হয়, এবং বাঁশিবাদকের বায়ু চালনার সাথে তার মধ্যে সুরের সৃষ্টি হয়, তেমন প্রকৃত ঈশ্বর ভক্তের অন্তরও হয় এরকম আত্ম-অহংকারহীন ও শূন্য, যার নিজস্ব কিছুই থাকে না, যে শুধু মাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছের কাছে নিজেকে সমর্পন করে এবং স্বয়ং তাঁর ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়। বাঁশিতে যেমন একটি মাত্র দিক খোলা অবস্থায় থাকে, তেমনই একজন প্রকৃত ভক্তের মনের দ্বার শুধু মাত্র পরমাত্মার প্রতিই উন্মুক্ত থাকে। তাই শ্রী কৃষ্ণ বাঁশিকে সর্বদা নিজের অঙ্গ বদ্ধ রাখেন। সকল গোপিকা তথা রাধারাণীর অত্যন্ত ঈর্ষার বস্তু ছিল শ্রীকৃষ্ণের এই বাঁশি। শোনা যায়, বৃন্দাবন ছেড়ে শ্রী কৃষ্ণ যখন মথুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, রাধারানী তাঁর বাঁশিটি নিজের কাছে রেখে দেন, যাতে বাঁশির টানে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে পুনরায় ফিরে আসেন। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি। শ্রীকৃষ্ণ ফেরেননি আর বৃন্দাবনে। পরবর্তীকালে তার বাঁশির স্থান নেয়, তাঁর প্রিয় শঙ্খ "পাঞ্চজন্য"।
কলমে - রিয়া রায়





Comments