top of page

চলুন বেড়িয়ে আসি গড়পঞ্চকোটে


সবুজে ঘেরা গড়পঞ্চকোট গড়


বাঙালি মানেই ভ্রমনপিপাসু। কিন্তু বর্তমানে দেশজুড়ে মহামারী তথা গোটা বিশ্বই পড়েছে মহামারীর কবলে। এমতাবস্থায় আমরা সবাই গৃহবন্দী থাকতে থাকতে চঞ্চল হয়ে উঠেছি। কোনো স্থানই আতঙ্ক মুক্ত নয়। তবুও তার মাঝেই যদি খোলামেলা শান্ত স্নিগ্ধ জায়গায় নিঃশ্বাস নিতে চান তাই জানিয়ে রাখি তার সুলুকসন্ধান। পরিস্থিতি ঠিক হলেই শুরু হয়ে যাবে কর্মব্যস্ততা ; তারই ফাঁকে সপ্তাহান্তে একটু মানসিক শান্তি উপলব্ধির জন্য বন্ধুবান্ধবসহ বা স্বপরিবারে একবার না হয় ঘুরেই এলেন।

আজ একটু অফবিট একটা জায়গার সন্ধান দিই। দিন দুই-ই যথেষ্ট ছুটি নিয়ে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন গড়পঞ্চকোট। নিসর্গ আর ইতিহাস একসঙ্গে বসত করে গড়পঞ্চকোটে।



কিভাবে যাবেন :

কলকাতা থেকে ভলভো বাসে করে আসানসোল পৌঁছে যান ঘন্টা তিনেকের মধ্যে । সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে বরাকর হয়ে গড়পঞ্চকোট আরো ৪৫ মিনিট । এছাড়াও হাওড়া থেকে ট্রেনে গিয়ে নামতে পারেন বরাকর, অথবা কুমারডুবি অথবা আদ্রা স্টেশনে। বরাকর থেকে গড় পঞ্চকোটের দূরত্ব ২২ কিমি। কুমারডুবি থেকে দূরত্ব ২৬ কিমি। আদ্রা থেকে দূরত্ব ২৩ কিমি। এই তিন স্টেশন থেকেই অটো বা গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গড় পঞ্চকোটে। কুমারডুবি সবচাইতে কাছে কিন্তু যোগাযোগ ভালো বরাকর বা আদ্রা কিংবা আসানসোল (৩৪ কিমি) থেকে। গড়পঞ্চকোট বেড়ানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বর্ষা বা শীতকাল।


কোথায় থাকবেন :

সরকারি ও বেসরকারি লজ দুইই পাবেন গড়পঞ্চকোটে । উল্লেখযোগ্য সরকারি লজ গুলি হল WBFDC গড়পঞ্চকোট নেচার রিসোর্ট - PHE গেস্ট হাউস - পাঞ্চেত রেসিডেন্সি - গড়পঞ্চকোট ইকো টুরিজম ।


গন্তব্যে পৌঁছে তো গেলেন কিন্তু মূলত কি কি দেখবেন সে বিষয়েও একটা ধারণা থাকা ভালো। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক গড়পঞ্চকোটে কি কি দেখবেন।



গড়পঞ্চকোটের গড় ছাড়াও বিরিঞ্চিনাথের মন্দির - জয়চন্ডী পাহাড় - বড়ন্তি তে মুরারডি লেক - কল্যাণেশ্বরী মন্দির দেখতে ভুলবেন না।

গড় এর দূরত্ব খুব একটা নয়, টুরিস্ট লজ গুলির এরিয়া থেকে মিনিট তিরিশেক । পিচ রাস্তা এক সময় শেষ হয়ে শুরু হয়েছে আদিবাসী গাঁয়ের লাল মাটির পথ। সেই পথ ধরে, আদিবাসী ঘরসংসার ছুঁয়ে, তাদের উঠোন দিয়ে বনবাংলো ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলে পৌঁছে যাবে এক বিশাল মাঠে। আছে একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সামনে ৬৪৬ মিটার উঁচু ১৮ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপ্ত জঙ্গলাকীর্ণ গড়পঞ্চকোট পাহাড়। এখানেই ছিল গড়। তার চিহ্ন এখনও রয়েছে পাহাড়ের গায়ে সবুজের খাঁজে খাঁজে। চোখে পড়বে গড়ের ধ্বংসাবশেষ, ভাঙাচোরা পুরনো বাড়ি। পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে খননে টেরাকোটা, জোড়বাংলো, পাঁচ চুড়োর ৯টি মন্দির, গোপন কুটুরি, সুড়ঙ্গ ছাড়াও নানান অতীত আবিষ্কৃত হয়েছে। এক সময় মাইকেল মধুসূদন এখানে চাকরি করতেন পঞ্চকোট রাজার এস্টেট ম্যানেজার হিসাবে। ইতিহাসবিদদের অনুমান রাজা দামোদর শেখর তার রাজ্যের পাঁচ প্রধান জাতিকে চিহ্নিত করতে রাজ্যের নাম রাখেন পঞ্চকোট ।

গড়পঞ্চকোটের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আর একটি দ্রষ্টব্য স্থল কাশীপুর রাজবাড়ী আরেক ইতিহাস বহন করে। মুঘল আক্রমণের সময় পঞ্চকোট রাজারা তাঁদের গড় কাশিপুরে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। লাল ইঁট, পাথর ও কাঠের তৈরি এই রাজবাড়ীর স্থাপত্য ও শিল্প কলা অসাধারণ। এছাড়াও বর্ষায় প্রকৃতির অনন্য রূপ মুগ্ধ করবে আপনাদের।


সতর্কতা :

নতুন জায়গায় ঘুরতে গেলে কিছু সাবধানতা তো নিজেদের হিতার্থে অবলম্বন করা আবশ্যক। স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধ্যের পরে টুরিস্ট লজের বাইরে বেরোতে নিষেধ করে কারণ এই অঞ্চলে রাতের পর নানা প্রকার দুর্বৃত্তকারীদের উৎপাত আছে বলে শোনা যায়।

চেষ্টা করবেন জনবসতিপূর্ণ জায়গায় থাকার।


এবার তবে আর দেরী কিসের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি গড়পঞ্চকোট ঘোরার সেরা সময়। প্রকৃতির অসামান্য রূপদর্শনে আপনিও ঘুরে আসুন গড়পঞ্চকোট।


কলমে - সুলগ্না ব্যানার্জ্জী





bottom of page