মগ্ন কবি, ধূসর যাপন
- dbwebdesk
- Nov 1, 2020
- 2 min read

(তৃতীয় পর্ব)
#১
আজ তিনদিন হয়ে গেল অগ্নি ফেরেনি। এমনটা সে প্রায়ই করে। আজকাল চিন্তিত হবার বদলে আশ্বস্ত হয় সে। শরীরের ব্যথা একটু জুড়োয়। প্রথম প্রথম চিন্তায় চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ভুলে যেত। পাঁচ সাতদিন পর যখন অগ্নি ফিরত তখন ঝাঁপিয়ে পড়তো।
------ ফোন বন্ধ রেখেছিলে কেন?
------ জানো না আমি কোথায় ছিলাম?
------ পৃথিবীর বাইরে তো আর যাও নি!
------ বউ বাচ্চার সামনে সব সময় ফোন ধরা যায়
না।
------ একবারও আমার কথা মনে পড়ে না?
উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করে না অগ্নি। প্রতিবার গ্রাম থেকে ফিরে আদরের বহর বেড়ে যায়। ভোর ভোর উঠে সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা আর সিগারেটের ছ্যাঁকা নিয়ে ডা: অগ্নিময় চ্যাটার্জির ব্রেকফাস্ট রেডি করে সে।
মাসের পরে মাস আর দিনের পরে দিন যায়। রাকার চোখের জলে ভরে ওঠে কবিতার খাতা। বেড়ে যায় ফ্যান ফলোয়ার। অতি দ্রুত ডা: অগ্নিময় চ্যাটার্জির কাছে একটা সেক্স টয়ের মতো ব্যবহৃত হতে লাগলো সে। ক্রমশ দুমড়ানো মোচড়ানো জীবনটাকে বয়ে চলা অসহ্য হয়ে ওঠে।
------ আপনার সব লেখাই আমি খুঁজে খুঁজে পড়ি।
------ কেন বাঁচালেন আমাকে?
------ ভালোবাসি রাকা আপনাকে।
------ আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না।
------ আপনার লেখা পড়েই আমি শিখেছি কি করে
ভালোবাসতে হয়।
------ আমাকে আর একবার বিষ এনে দিন।
------ বিষ নয় রাকা। আমি তোমায় অমৃত দেব।
অমৃত!!!! পিশাচের মত বেঁকে চুরে যেতে থাকে রাকার মুখ চোখ। এই তোমার অমৃত? ডা: অগ্নিময় চ্যাটার্জি?
ফেসবুকের পাতায় ডা: অগ্নিময় চ্যাটার্জির সুখী দাম্পত্য ছবি। ঘেন্নায় একদলা থুতু ছিটিয়ে দেয় রাকা।
এনাফ ইজ এনাফ!
ল্যাপটপখানা কাঁধে ঝুলিয়ে রাতপোশাকেই পায়ে স্লিপার গলিয়ে রাস্তায় নেমে আসে রাকা। পিছনে পড়ে থাকে আড়াই বছরের মিথ্যে ভালোবাসাবাসির এক মায়াযাপন। আর ডায়েরীর পাতা ভর্তি কবিতার বুনন।
#২
পূবের আকাশে কে যেন আলতার শিশি উল্টে ফেলেছে। সিঁদূরে মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। ভোর রাত্তিরে পশলাখানিক বৃষ্টি হয়ে গেছে। ঠাকুর দালানে মায়ের কাঠামোয় মাটি চড়ানোর পালা শেষের দিকে। না:! বাপের হাতই পেয়েছে নিখিল কুমোর। ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রীন টিতে চুমুক দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন রথীন্দ্র। ভেতরে তখন আদ্যিকালের এইচ এম ভি রেকর্ডে বাজছে, " কা করু সজনী আয়ে না বলম,,,"
হপ্তা দুয়েক আগে সাজানো রথের গায়ে রজনীগন্ধার মালা শুকিয়ে হাকুষ্টি গাবলেটে দড়ি বেরিয়ে পড়েছে। হালকা গেট ঘোরানোর শব্দে চমকে উঠলেন রথী। ভোরের ঝরা শিউলীর মতো সিং দরজায় দাঁড়িয়ে রাকা।
উদভ্রান্তের মতো নীচে নামলেন। কতকাল ভালো করে খায়নি মেয়ে। গলায়, হাতে কালশিটে দাগ পড়ে বেগুনী রঙ ধরেছে। দুচোখে যেন সাত সমুদ্রের সুনীল জলরাশি থমকে আছে। মারিয়ার মতোই ঈষৎ চৌকো আর শক্ত চিবুক। এই জেদী, অবাধ্য মেয়েকে সামলানো তাঁর কর্ম নয়। মাত্র দুবছর বয়সে বাপের ঘাড়ে ফেলে রেখে মারিয়া চললো মিখাইলের হাত ধরে। কোলকাতার মোহ তখন তার কেটে গেছে। সেই থেকে দিদা আর বাপের অতিরিক্ত আদরে বড্ড একগুঁয়ে মেয়ে।
মাঝে মাঝেই বেপাত্তা বছর খানেকের জন্য। একা থাকতে ভালোবাসে বলে জোকার ওদিকে একটা ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটও মেয়ের জন্য কিনে রেখেছেন তিনি।
ক্রাইসিস পিরিয়ডগুলোতে রাকা ওখানেই থাকে।
অনেক সহ্য করেছেন রথী। এই মেয়েকে আর উনি ছাড়বেন না। এবার শক্ত হতে হবে।
কোনদিন যদি মারিয়া এসে সামনে দাঁড়ায় কি উত্তর দেবেন তিনি?
------- বাপি!
এই ডাকের কাছে বড্ড অসহায়, বড্ড ভঙ্গুর লাগে নিজেকে রথীন্দ্র নারায়ণ সেনের।
★★★
(চলবে)
কলমে - পৌলোমী মুখার্জী ।





Comments