top of page

জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠান উপলক্ষে চিতল মাছের মালাইকারি


ree

ডনবেঙ্গল ডেস্ক : বাঙালির হেঁশেলে মালাইকারি শব্দটা ভীষণভাবেই পরিচিত। কিন্তু, মালাইকারি বললেই সবার প্রথম যে পদটির কথা মাথায় আসে, তা হল “ চিংড়িমাছের মালাইকারি”। তবে বাঙালির হেঁশেলে আজকের পদটির জন্ম হল কীভাবে ? সবার আগে সেকথাই একটু বলি।


জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাজারে গিয়েছিলাম হঠাৎ এক চিতল মাছের দেখা পেলাম। আমাদের এদিকে এই মাছ চাইলেই মেলে না, তাই নাগালে পেয়ে সোজা নিয়ে এলাম বাড়িতে। পাকা চিতলের বড়ো বড়ো পেটি হাতে নিয়ে পড়ে গেলাম ধন্দে! রাঁধব কী ? চিতলের সাথে বাঙালির হেঁশেলের পরিচয় তো মুইঠ্যা নামে। সে ভারি ঝামেলার রান্না, কাজেই নতুন কিছু ভাবতে হবে। কখনও কখনও সময়ের হাতে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিতে হয়। আর এভাবেই বানাতে গেলাম রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল।


৭ খানা চিতল পেটি ধুয়ে লবণ আর হলুদ মাখিয়ে বাকি জোগাড়ে লেগে পড়লাম। বেশি কিছু উপকরণ এমন কিন্তু নয়

২ টি মাঝারি আকারের পিঁয়াজ প্রথমেই মিক্সিতে পেস্ট করে নিলাম। এরপর দুটি ছোটো আকারের টম্যাটো পেস্ট করে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে রাখলাম।


কড়াইতে সুস্বাদু সরিষার তেল নিয়ে, মাছের পিস গুলো ভালো করে ভেজে নিলাম। পড়ে থাকা তেলে আরও খানিক তেল যোগ করে একে একে গোটা ফোড়ন ১ টি শুকনো লংকা, হাফ চামচ গোটা জিরা, লবঙ্গ দুটি, এলাচ ১ টি, এক টুকরো দারচিনি আর এক চিমটে চিনি যোগ করতেই সুগন্ধ আর লালচে রং জেগে উঠল। বাঁটা পেঁয়াজ আর থেঁতো করা ২ কোয়া রসুন তেলে দিতেই অপূর্ব এক গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। হালকা রং ধরতেই দিয়ে দিলাম টম্যাটো পেস্ট। সামান্য কষিয়ে নেওয়া তারপর একে একে হাফ টেবিল চামচ জিরে ও ধনে গুঁড়ো, শুকনো লংকা গুঁড়ো, হলুদ আর আদাবাঁটা যোগ করে দিলাম, সঙ্গে একচিমটে লবণ ও হাফচামচ ঘরে তৈরি শাহী গরম মশলা। মিনিট দুয়েক নাড়াচাড়া, তারপর হাফকাপ জল দিয়ে ঢাকা দেওয়া মশলা থেকে তেল বেড়িয়ে আসা পর্যন্তই অপেক্ষা।


ঠিক এই মুহূর্তেই মাথায় এল অন্য ভাবনা, আর রেসিপির দিক পরিবর্তন হয়ে গেল। ক’দিন আগেই কিনেছিলাম কোকোনাট পাউডার। মিশিয়ে দিলে কেমন হয়! ভাবা মাত্রই কাজ। ঢাকনা খুলতেই দেখলাম মশলা থেকে তেল ছেড়ে এসেছে। ৩ টেবিল চামচ কোকোনাট পাউডার ঐ মশলায় যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে দিলাম। বাদামি মশলা সুন্দর রং ধারণ করল নিমেষে। এককাপ জল মিশিয়ে স্বাদমতো লবণ আর চিনি যোগ করে , ১মিনিট ফুটিয়ে ভাজা মাছের পিসগুলো ঝোলে ডুবিয়ে আরো একমিনিট অপেক্ষা। নামানোর আগে একচিমটে শাহী গরম মশাল উপর থেকে ছড়িয়ে দিলাম।


ব্যাস তৈরি নতুন রান্নাটি। নাম দেব কী! চিতল মাছের মালাইকারি ? হ্যাঁ, তাই দিলাম নাম। কিন্তু এই মালাইকারি বস্তুটি আসলে কী ? ফরাসি শব্দ থেকেই নাকি এই মালাই শব্দের উৎপত্তি। যার প্রকৃত অর্থ ঘন দুধের সর, কিন্তু চিংড়ি বা চিতল,বাঙালির মালাইকারিতে কিন্তু নারোকেলের দুধ ছাড়া কোনো দুধের সর বা মালাই ব্যবহার করা হয় না। তবে নিশ্চিত ,এই কারণে মালাইকারি নামকরণ নয়। তবে ? বিভিন্ন তথ্য বলছে—মূল শব্দটা ভারতীয় অপভ্রংশ। কর্মসূত্রে মালয় প্রদেশে থাকা দক্ষিণের মানুষরা মালয় প্রদেশের ‘ফ্রায়েড প্রন কারি’কে নিজেদের মতো করে নাম দিয়েছে। এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য, কারণ মালাইকারিতে ব্যবহার করা উপাদান গুলি বিশেষ করে নারকেল ও কারিপাতা, দক্ষিণভারতের মানুষদের খাদ্য তালিকার প্রায় অবধারিত উপাদান। সেই অর্থে আমার প্রস্তুত করা রান্নাটি চিতল মাছের মালাইকারি হতেই পারে। আমি কারিপাতা দিইনি,কিন্তু আপনারা দিলে মোটেই খারাপ হবে না টেস্ট।

তবে আর কী ? রেঁধে ফেলুন চটপট। সৃষ্টি যে হেঁশেলেই হোক, বাঙালির খাদ্য রসিক মন হেঁশেলের সীমা মানাতে নারাজ।


রেসিপি : রুমকি রায় দত্ত।

 
 
 

Comments


bottom of page